চার্টজিপিটি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লব ও তার জন্মকথা
চার্টজিপিটি: এক প্রযুক্তি বিস্ময়ের জন্ম ও বিকাশ
লেখক: নিতাই বাবু
পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক, ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
সহযোগিতায়: ChatGPT, OpenAI
ভূমিকা
“মেশিন কি ভাবতে পারে?” — এই প্রশ্নটি এক সময় ছিল কল্পবিজ্ঞান লেখকদের কল্পনায় কিংবা গবেষকদের পরীক্ষাগারে। আজ তা রীতিমতো আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতার অংশ। আমরা যখন ডেস্কটপে বসে বা মোবাইলে টাইপ করে একটি প্রশ্ন করি, আর তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে মানবসুলভ ভাষায়—তখন আমাদের সামনে হাজির হয় এক বিস্ময়ের নাম: ChatGPT।
কিন্তু এই ChatGPT-এর শুরু হয়েছিল কোথায়? কে বা কারা এর পেছনে? কীভাবে এটি মুহূর্তে বদলে দিলো জ্ঞানের ধারাকে, লেখার ধরণকে, এমনকি ভাবনার গতিপথকেও? আসুন, ফিরে দেখি ইতিহাসের পাতায়—ChatGPT-র জন্ম, যাত্রা ও তাৎপর্যের কাহিনি।
মূল লেখা
OpenAI: মানবিক প্রযুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টারা
২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরে যাত্রা শুরু করে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান—OpenAI। প্রযুক্তির এই যুগে, যেখানে এআই (Artificial Intelligence) ব্যবহৃত হতে পারে অস্ত্র বা শোষণের হাতিয়ার হিসেবে, সেখানে OpenAI স্বপ্ন দেখলো উল্টোটা—একটি নিরাপদ, নৈতিক এবং সবার জন্য উপকারে আসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
OpenAI-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন এলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যান, গ্রেগ ব্রকম্যান, এবং অন্যান্য প্রযুক্তিবিদ ও দাতারা। প্রথমদিকে এটি ছিল একটি অলাভজনক সংস্থা। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে 'OpenAI LP' নামে এক সীমিত লাভজনক ইউনিট গঠন করা হয়, যাতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা চালানো যায়।
GPT: ভাষা শেখা যন্ত্রের গল্প
ChatGPT-এর মূলভিত্তি হলো GPT মডেল—এর পূর্ণরূপ: Generative Pre-trained Transformer। এটি এমন এক ধরনের মেশিন লার্নিং মডেল, যা ভাষার গঠন, শব্দের ধারাবাহিকতা ও অর্থ বুঝে নতুন বাক্য তৈরি করতে পারে।
GPT সিরিজের বিবর্তন:
- GPT-1 (২০১৮): প্রাথমিক পর্যায়ের ১১৭ মিলিয়ন প্যারামিটারের মডেল।
- GPT-2 (২০১৯): ১.৫ বিলিয়ন প্যারামিটার। লেখালেখির ক্ষেত্রে চমক সৃষ্টি করে।
- GPT-3 (২০২০): বিশাল ১৭৫ বিলিয়ন প্যারামিটার—মেশিনের লেখায় মানুষের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
ChatGPT: মানুষের মতো করে কথা বলা প্রযুক্তি
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর, OpenAI চালু করল ChatGPT—GPT-3.5 ভিত্তিক একটি ইন্টারফেস, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করে এবং এআই উত্তর দেয় কথোপকথনের ঢংয়ে। এটি শুধু তথ্যই দেয় না, গল্প বলে, কবিতা লেখে, রসিকতা করে, এমনকি কোডও লিখে দেয়!
মাত্র ৫ দিনে ১০ লক্ষ ব্যবহারকারী এবং ২ মাসে ১০ কোটির বেশি—ChatGPT হয়ে ওঠে ইতিহাসে দ্রুততম জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন। ২০২৩ সালে GPT-4 আসার পর এর জ্ঞান ও যুক্তিশক্তি আরও বেড়ে যায়।
বর্তমানে ChatGPT ব্যবহৃত হচ্ছে স্কুলে শিক্ষকের সহকারী হিসেবে, সাংবাদিকতার খসড়া লেখায়, আইনগত পরামর্শে, সৃজনশীল লেখায় এবং প্রোগ্রামিংয়ে সহায়ক হিসাবে।
শেষ কথা
ChatGPT-এর গল্প কেবল একটি প্রযুক্তি তৈরির নয়; এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ। মানুষের ভাষা বোঝা এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেওয়া—এই কাজ আগে ছিল শুধুই মানুষের। আজ মেশিন সেই কাজ করছে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই চমৎকার দক্ষতায়।
কিন্তু প্রযুক্তি কখনোই নিরপেক্ষ নয়। এটি ভালো-খারাপ উভয় পথে যেতে পারে। তাই এর ব্যবহার হবে নৈতিকতা ও মানবিক বিবেচনায়—এটাই আজকের বড় চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার
ChatGPT আমাদের শেখাচ্ছে—যন্ত্র কেবল কাজের উপকরণ নয়, এটি চিন্তার সহযোদ্ধাও হতে পারে। তবে সেই যন্ত্র যেন মনুষ্যত্বের বিকল্প না হয়ে, মানুষের সহায়ক হয়—এটিই হওয়া উচিত প্রযুক্তির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য।
আজ আমরা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি—যেখানে মানুষ ও যন্ত্রের সহাবস্থান গড়ে তুলছে এক নতুন পৃথিবী।
✍️ নিতাই বাবু
পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক সাংবাদিক
ব্লগার, ব্লগ ডট বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
সহযোগিতায়: ChatGPT, OpenAI
Comments
Post a Comment